জুন ৬, ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম
সরকার নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন এন্ড ট্রান্সফরমেশন’ (HEAT) শিরোনামে একটি পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ থেকে ২০২৮ এর জুন পর্যন্ত। ব্যয় হবে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইটি) ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীর হার বৃদ্ধি করা। সরকার এ প্রকল্পটিকে মানবসম্পদ হিসেবে নারীর উচ্চশিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ‘অর্থ বিনিয়োগের একটি আঞ্চলিক মডেল’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।
এ প্রকল্পটি মঙ্গলবার (৬ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মোট ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা সরকার যোগান দিবে। আর বিশ্বব্যাংক থেকে প্রকল্প ঋণ নেয়া হবে ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এ বিশেষ প্রকল্পের আওতায় সমগ্র বাংলাদেশের সকল সরকারি ও ইউজিসি’র অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্রগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ উইমেন কে অবকাঠামো নির্মাণ, উপকরণ ক্রয়, বৃত্তি, অনুদান, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম, প্রকাশনা এবং দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
অর্থ ব্যয়ের খাত হিসেবে বর্ণিত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট ১টি আবাসিক ভবন নির্মাণ, ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ বর্গফুট ১টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, ১ লাখ ৪৯ হাজার ২০৯ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৪টি যানবাহন ক্রয়, কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশন সরঞ্জাম ও তথ্য প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ক্রয়, প্রকল্প অনুদান, গবেষণা অনুদান, সাংস্কৃতিক অনুদান ও অন্যান্য অনুদান, আসবাবপত্র ক্রয়, বৃত্তি/স্কলারশিপ ও ইন্টার্নশিপ ভাতা, সেমিনার ও কনফারেন্স, পরামর্শক সেবা, বই ও সাময়িকী, প্রকাশনা ও বিজ্ঞাপন, দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য।
মূলত এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি)-এ বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকাভুক্ত (পৃষ্ঠা-৫০৬, ক্রমিক-১৪6) করা হয়।
সর্বশেষ ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) উচ্চ শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কার্যক্রম গ্রহণ করে এ খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
একনেক সভায় এদিন মোট ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ:
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফরিদপুর জেলার মধুমতি নদীর বাম তীরের ভাঙন থেকে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর সংযোগ রাস্তাসহ অন্যান্য এলাকা সংরক্ষণ ও ড্রেজিং।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প যথাক্রমে- বাগেরহাট জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, নেত্রকোণা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধন) এবং নড়াইল জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নতুন ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থান ভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণাগার উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ (পঞ্চম সংশোধন)।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যথাক্রমে ১০টি মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, পটুয়াখালী (প্রথম সংশোধন) প্রকল্প।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে- জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং স্থাপনা নির্মাণ এবং হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠা (তৃতীয় সংশোধন)।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১: শেওলা, রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প।
গৃহায়ন ও গণপূত মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে- সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি রিং রোড নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড নির্মাণ (চতুর্থ সংশোধন)।
আরও রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প। এর একটি হলো সাভার সেনানিবাস এলাকায় মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা ঢালী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধন)।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও প্রতিমন্ত্রীরা এ সভায় অংশ নেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।